সফর মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করব সফর মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
সম্পর্কে ।আশা করি , এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে কেননা সফর মাসের
গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। আপনি যদি সফর মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে ভালোভাবে
জানতে চান। তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রিয় বন্ধুরা আজকের এ আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে সফর মাসের গুরুত্ব তাৎপর্য ও
ফজিলত এবং সফর মাসে করনীয় বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি এই
বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা আজকের এই
আর্টিকেলটিতে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তবে আর দেরি কেন চলুন মূল আলোচনায়
যাই।
সফর শব্দটি আরবি "সিফর" ধাতু থেকে। সফর মাস আরবি বছরের দ্বিতীয় মাস। সফর শব্দের
অর্থ হচ্ছে খালি করা বা শূন্য করা। সে সময়ে আরব দেশে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে
লড়াই চলত ।মহরম মাসে লড়াই বন্ধ থাকতো। কিন্তু সকল মাস এলে লড়াই শুরু হয়ে যেত
পুরুষের দলে দলে সেই লড়াইয়ে যোগ দিত। হলে আরবের প্রতিটি ঘর শূন্য হয়ে যেত ।
আরবিতে" সাফারুল মাকান" বলতে আরবের মানুষ শুন্য এই ঘরগুলোকে বুঝাতো আর সেই থেকে
নামকরণ করা হয়েছে সফর।
সফর মাস অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ মাস। পবিত্র এই মাসে মহান রাব্বুল
আলামিন অনেক বেশি রহমত ও বরকত নাযিল করেন তাই এই মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত
বন্দেগীতে মশগুল থাকতে হবে। কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে , নফল ইবাদত ও তাসবিহ
তাহলিল পাঠ করতে হবে। তবে ইসলামে পূর্বে জাহিলি যুগে নানা ধরনের কুসংস্কার ঘিরে
ছিল। সে সময় মানুষ মনে করত সফর মাস অশুভ অকল্যাণ ও বিপদ আপদ নেমে আসে।
এই মাসে বিয়ে-শাদী দিলে অশুভ হয় , ব্যবসা বাণিজ্যের লোকসান হয় ,অন্যত্র যাত্রা
মঙ্গলজনক হয় না ইত্যাদিতে বিশ্বাস করত। তারা আরো বিশ্বাস করতো এই মাসে বেশি রোগ
বালাইয়ের সংক্রমণ বেশি হয় ইত্যাদি বিশ্বাস করত তাই তারা সফল মাস আসলে অনেক
দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতো এবং প্রার্থনা করতো কখন সফর মাস শেষ হবে। কিন্তু আল্লাহ
তা'আলা বলেন , এরপরে যখন শুভ দিন আসে তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে এটাই আমাদের
জন্য উপযুক্ত আর যদি অকল্যাণ আসে তাহলে তারা মুসার ও তার সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে
অভিহিত করে।
মহান রাব্বুল আলামিন এসব কুসংস্কার ও অশুভ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা কে
নিন্দা করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সংক্রামক
,ব্যাধি কুলক্ষণ ও অনাহারে পেট কামড়ানো বা পোকামাকড়ের হামাহ এসবের কোন অস্তিত্ব
নেই।(মুসলিম শরীফ)।
আরো পড়ুনঃ যাকাত কাদের উপর ফরজ
প্রতিটি মুসলমানের জন্য শিরক এবং বিদআত থেকে দূরে থাকা উচিত এবং এই বিষয়ে
পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা এবং সতর্কতার সাথে জীবন পরিচালনা করা উচিত মনে রাখতে
হবে মানব জীবনের প্রতিটি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান। সময়কে কাজে
লাগিয়ে দিন মাস ও বছরের পিঠে চরে যা এগিয়ে চলছে অবিরত তার ফল স্বরূপ মানুষ পাবে
জান্নাত বা জাহান্নাম।
প্রিয় বন্ধুরা তাহলে আমাদের কতটা সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করতে হবে বুঝতে
পেরেছেন। প্রতিটি দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সফর মাসের শেষ দেখে প্রচন্ড অসুস্থ ছিলেন সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি
নিজেকে কিছুটা সুস্থ অনুভব করেন এবং গোসল করে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করেন।
মসজিদের নববীতে হাজির হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তার এই সুস্থতা দেখে মদিনা বাসি
আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহাবীরা দেখতে আসে এবং দান সদকা
করতে থাকে।
তাই সফর মাসে দান সদকা করা অনেক উত্তম। যে ব্যক্তি এই দিনে ইবাদত বন্দেগী করবে ,
দুরুদ শরীফ পাঠ করবে , এবং দান-খয়রাত করবে আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণতা দান করবেন।
এরপরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার
জীবনের শেষ কৌশল এবং এরপর আর তিনি জামাতের শহীদ নামাজ আদায় করতে পারেননি।
তাই সফর মাসের শেষ বুধবার আখেরি যাহার সোম্বা নামে পরিচিত যার অর্থ হচ্ছে শেষ
গোসল। তাজকেরাতুল আওরাত কিতাবে উল্লেখ্য আছে , যে ব্যক্তি সফর মাসের শেষ বুধবার
অর্থাৎ আখেরি চাহার সোম সোম্বা এই দিনে ফজরের নামাজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
জামাতের সহিত আদায় করবে এবং নামাজ শেষে নিচের সাতটি আয়াত পড়ে শরীরে ফু দিবে
আল্লাহ তাআলা তাকে বালা মসিবত থেকে নিরাপদে রাখবেন। আয়াত গুলো হলো-
১. سَلٰمٌ ۟ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ -- সালামুন কাউলাম রাব্বির রহিম
২. سَلٰمٌ عَلٰی نُوۡحٍ فِی الۡعٰلَمِیۡنَ-সালামুন আলা নুহিন ফিল আলামিন
৩. سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ -- সালামুন আলা ইব্রাহীম
৪. سَلٰمٌ عَلٰی مُوۡسٰی وَ هٰرُوۡنَ -- সালামুন আলা মুসা ওয়া হারুন
৫. سَلٰمٌ عَلٰۤی اِلۡ یَاسِیۡنَ --সালামুন আলা ইল ইয়াসিনন
৬. سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ طِبۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡهَا خٰلِدِیۡنَ --সালামুন আলাইকুম
ত্বিব তুম ফাদ খুলুহা খালিদিন
৭. سَلٰمٌ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ -- সালামুন হিয়া হাত্তা মাত্বলাইল
ফাজ্রি।
এরপর মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দুয়া করতে হবে জীবনের সব
চাওয়া পাওয়া বলতে হবে , বালা মসিবত থেকে মুক্তি চাইতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার
রহমতের বারিধারা যেন আমাদের উপর বর্ষণ করে সে দোয়া করতে হবে। মহান রব্বুল আলামীন
অন্তর্যামী। তিনি সকলের অন্তরের খবর জানেন তারপরেও চাইতে হবে আল্লাহ তায়ালার
কাছে।
কেননা হাদীস শরীফে এসেছে , মাল্লাহ ইয়াস আলিল লাহা ইয়াদগাব আলাইহি অর্থ হচ্ছে যে
ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করে না আল্লাহ তাআলা তো তাহার উপর রাগান্বিত
হন। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। পবিত্র এই সফর মাসে আমরা এবাদত
বন্দেগীতে কাটাবো , সাধ্যমত দান খয়রাত করব , বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করবো এবং
দুরুদে ইব্রাহিম তেলাওয়াত করব।
প্রিয় বন্ধুরা আজকের মত এখানেই শেষ করছি , আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই
বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ
হাফেজ!