যে ১০ টি কারণে মাসিক দেরিতে হয় - নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায়

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা ভালো আছেন? আজকে আমি আপনাদের সামনে যে ১০ টি  কারণে মাসিক দেরিতে হয় - নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে মেয়েদের জন্য । প্রতি মাসে নিয়মিত পিরিয়ড না হলে অনেক সমস্যা হয়।
যে-কারণে-মাসিক-দেরিতে-হয়
তাই তো এই সম্পর্কে জানা প্রতিটি মা বোনের উচিত। প্রতিমাসে ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একজন নারীর ঋতুস্রাব প্রক্রিয়া চলতে থাকে কিন্তু ঋতুস্রাব চালু হতে যদি এক থেকে বেশি সময় লাগে বা এর থেকে কম সময়ে শুরু হয় তাহলে সেটাই সমস্যা। আপনি যদি জানতে চান যে ১০ টি কারণে মাসিক দেরিতে হয় - নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অনিয়মিত মাসিক/ঋতুস্রাব হওয়ার কারণে যে সকল সমস্যা দেখা দেয়

প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব বা মাসিক না হলে সেটাকে অনিয়মিত মাসিক বলে। এই সমস্যা যেকোনো বয়সের মেয়েদের হতে পারে। চলুন তাহলে বন্ধুরা অনিয়মিত ঋতুস্রাব হওয়ার কারণে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় সেগুলো সম্পর্কে জেনে নি-

  • অতিরিক্ত ব্লেডিং হতে পারে। এক মাসে রক্তপাত বেশি হতে পারে আবার অন্য মাসে রক্তপাত কম হতে পারে
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
  • মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যায় না
  • বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে
  • নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড স্থায়িত্ব হতে পারে
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও অস্থির ভাব সৃষ্টি হয়
  • অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা তে পারে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিয়মিত মাসিক হলে যে সকল সমস্যা দেখা হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে।

যে ১০ টি  কারণে মাসিক দেরিতে হয়

প্রিয় বন্ধুরা এখন আমরা জানবো যে ১০টি কারণে মাসিক দেরিতে হয় সেই সম্পর্কে। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অনিয়মিত মাসিক হওয়ার দশটি কারণ সম্পর্ক-
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপঃ প্রতি মাসে পিরিয়ড নিয়মিত না হলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। আর অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে হাইপোথ্যালমিয়া অ্যানিমিয়া রোগ হতে পারে হলে হর মনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হতে পারে এবং মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পলিস্টিক ওভারি সেনন্ট্রোমঃ এই রোগটি হরমোন জনিত। অতিরিক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ সেবন করলে এই রোগটি দেখা দিতে পারে। এমন কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে এই রোগটি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ঘনঘন পিল খেলে মাসিকের সমস্যা হতে পারে।
  • থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ আমাদের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো সমস্যার কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়াঃ পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেহের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধ পাওয়া। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আবার শরীরের ওজন কমে যাওয়ার কারনেও মাসিকের সমস্যা দেখে যেতে পারে।
  1. অতিরিক্ত ভ্রমণের কারণেঃ অতিরিক্ত ভ্রমণ দেহের জন্য ভালো নয়। মেয়েদের শরীর সাধারণত নতুন নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে আপনার পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
  2. জরায়ুর টিউমারঃ অনেক সময় বিভিন্ন কারনে মেয়েদের যারা এতেমার সৃষ্টি হয় যা ঋতুস্রাব প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেয় ।ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
  3. বয়সন্ধিকালঃ বয়সন্ধিকালে সাধারণত মেয়েদের শরীরে স্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কম থাকে যার ফলে মাসিক দেরিতে সংঘটিত হয়। এছাড়াও জন্মগত কারণে পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
  4. অসুস্থতাঃ যেসব মেয়েরা অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির অর্থাৎ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। অল্প কিছুতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই সব মেয়েদের ঋতুস্রাব প্রক্রিয়া ও দুর্বল হয়ে থাকে দিতে পারে।
  5. অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলেঃ অতিরিক্ত যে কোনো কাজের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে শরীরে স্ট্রোজেন হরমোনের লেভেল কমে যায় যার ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দেয়।
  6. শরীরের গঠনঃ শরীরের গঠনের উপর নির্ভর করে শরীরে ভিন্নতা তৈরি হয়। অনেকের বংশগত কারণে শরীর গঠনে ভিন্নতা থাকে যার ফলে নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া পিরিয়ড দেরিতে হয়।

অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ

প্রিয় বন্ধুরা, এখন আমরা জানবো নিয়মিত মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে অর্থাৎ অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কোন গুলো। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নি-

  •  মানসিক চাপ
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
  • খুব বেশি ব্যায়াম করা
  • গর্ভনিরোধ বড়ি খাওয়া
  • মেনোপজ
  • পলেস্টিক ওভারি সিনড্রোম
  • হৃদরোগে আক্রান্ত হলে
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে
  • ইত্যাদির কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
    যে-কারণে-মাসিক-দেরিতে-হয়

নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায়

প্রিয় বন্ধুরা এখন আমরা জানবো নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে। নিয়মিত মাসিক হওয়া সুস্থতার লক্ষণ। কিন্তু প্রতিমাসে মাসিক হতে বিলম্ব হলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যে দশটি প্রধান কারণে মাসিক দেরিতে হয় বা অসুবিধে সৃষ্টি হয় আশা করি সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছ... তো এবার চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নিয়মিত মাসিক হওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

  1. খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে সতেজ শাকসবজি ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। সকল প্রকার ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং সব সময় স্বাস্থ্যকর ও পুস্তকর খাবার খাবার চেষ্টা করতে হবে।
  2. নিয়মিত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। নিয়ম মত ঘুম না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বে সুখ দেখা দিতে পারে।তাই শরীর সুস্থ রাখার একটি ভালো কার্যকারী টাইপ হচ্ছে নিয়মিত ঘুমানো।
  3. মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে এবং কোন প্রকার দুশ্চিন্তা করা যাবে না
  4. অতিরিক্ত স্ট্রেস করা যাবে না এবং নিয়ম মত ব্যায়াম করতে হবে।
  5. যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে তাদের  স্বাস্থ্য কর জীবন যাপন করতে হবে।
  6. জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলসহ ওষুধের ব্যবহার সীমিত মাত্রায় করতে হবে।
  7. নিয়মিত এলোভেরা , কাঁচা হলুদ , কাঁচা পেঁপে , দারুচিনি , ও জিরা খেলে মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  8. কিন্তু সমস্যা যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী ওষুধ স্থাপন করতে হবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আপনারা মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ ও নিয়ম মত মাসিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কিন্তু অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা গুরুত্বতর হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবে চলুন তাহলে কোন সমস্যাগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন-
  • হঠাৎ যদি পিরিয়ড বেশি পরিমাণে হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।
  • পিরিয়ড হওয়ার পরে 35 দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।
  • পিরিয়ড যদি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় ধরে চলে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
  • অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিলে অর্থাৎ একই মাসের মধ্যে দুই থেকে তিনবার পিরিয়ড হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
  • যদি ৪৫ বছরের আগে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় এবং মেনোপজ হওয়ার পরে যদি পিরিয়ড চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।
  • পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্যথা ও রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে।
    যে-কারণে-মাসিক-দেরিতে-হয়

শেষ কথাঃযে ১০ টি  কারণে মাসিক দেরিতে হয় - নিয়মিত মাসিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করেছি, সেগুলো প্রত্যেকটি নারীর বা মেয়ে মানুষের জানা উচিত  যে ১০ টি  কারণে মাসিক দেরিতে হয় । কেননা প্রতিটি মেয়ের প্রতি মাসে মাসিক হয়ে থাকে এবং এর জন্য অনেক মেয়ে অনেক সমস্যায় ভুগছেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে। আর্টিকেলটি পড়ে ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সকলে ভাল থাকবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ! 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন