যাকাত কি? যাকাত হিসাব করার নিয়ম - easykhobor
বন্ধুরা যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ ওয়াজিব হওয়ার সময় শোনা রুপা বা কোন ব্যবসায়িক কোনো ইত্যাদি মূল্যে ধরতে হবে যাকাত তখনকার ওয়াজিব হওয়ার সময় কার। বাজারদর হিসেবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি সেই স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।
সূচিপত্রঃ যাকাত ২০২৩
- যাকাত কি?
- যাকাত হিসাব করার নিয়ম
- যাকাত ২০২৩
যাকাত কি?
ইসলামের পরিভাষায় আরবি শব্দের যাকাত অর্থ হলো বৃদ্ধি, পবিত্রতা পরিছন্নতা। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি রুকনের মধ্যে যাকাত অন্যতম। যাকাত ইসলামে পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের তাদের হিসাব নিকাশ এর নির্ধারিত পরিমাপ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরীব ও দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়াকে যাকাত বলে। অর্থাৎ অর্থ সম্পদ মানুষের হাতে পুঞ্জিভূত থাকুক আল্লাহতালা পছন্দ করেন না পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান কর। সূরা মুযযামমিল, আয়াত 20
আরো পড়ুন কিভাবে মেয়ে পটাতে হয়।
যাকাত হলো আল্লাহ পাক প্রদত্ত গরিব-দুঃখীদের অধিকার। যাকাত আদায় করা ধনীদের ওপর আল্লাহ পাক ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক আরো বলেন, এবং তাদের ধনীদের ধন-সম্পদের দারিদ্র্য ও বঞ্চিত হক রয়েছেন( সূরা আয-যারিয়াত আয়াত ১৯)
যাকাত হিসাব করার নিয়ম
যে অর্থ সম্পদ যাকাত আসে যাকাত হিসাব করার নিয়ম সেই অর্থ সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করা ফরজ। অর্থাৎ ২.৫% মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তার দ্বারা কোন আসবাবপত্র ক্রয় করে তা দাড়াও যাকাত দেওয়া যায়।
সোনা রুপার মধ্যে যদি ব্রোঞ্জ ব্যবস্থা তামা ইত্যাদি কোন কিছুর মিশ্রণ থাকে সে মিশ্রিত সোনা রুপা চেয়ে কম হয় তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতে হিসাব করা হবে। মিশ্রিত দ্রব্যের কোন ধাতব্য হবে না আর যদি মিশ্রিত দ্রব্য সোনা রুপার চেয়ে অধিক হয় তাহলে সেটাকে আর সোনা রুপা ধরা হবে না বরং ওই মিশ্রিত দ্রব্যই হবে যাকাত ধরা হবে।
যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ ওয়াজিব হওয়ার সময় শোনা রুপা বা কোন ব্যবসায়িক কোনো ইত্যাদি মূল্যে ধরতে হবে যাকাত তখনকার ওয়াজিব হওয়ার সময় কার। বাজারদর হিসেবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি সেই স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।
ইসলামের যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বছর ধরা হবে। যখনই কেউ নেশাপ পরিমাণ অর্থাৎ অর্থ সম্পদে মালিক হবে তখন থেকে তার যাকাত বৎসর শুরু ধরতে হবে।
শেয়ার মূল্যে ধরার ক্ষেত্রে মাশাআল্লাহ হল যারা কোন কোম্পানির লভ্যাংশ অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন সে আর বেচাকেনা করে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে তারা শেয়ারে বাজারদর ধরে যাকাত হিসাব করবেন।
আর যারা শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি কোন মূল্য উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ অর্জন করা এবং সাথে সাথে ওই উদ্দেশ্য থাকে যে শেয়ারে ভালো দল পারলে বিক্রয় করে দেব তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর সে অংশ যাকাতযোগ্য অর্থ সম্পদ এর বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে।
অবশিষ্ট অংশের ওপর যাকাত আসবে না। উদাহরণস্বর যাকাত শেয়ার মার্কেট তার ভ্যালু বা বাজারদর ১০০ টাকা তার মূল্যের ষাট বা কোম্পানির বিল্ডিং মেশিনারিজ ইত্যাদি বিপরীতে আরো 40 ভাগ কোম্পানির নগদ অর্থ কাঁচামাল ও তৈরি মালের বিপরীতে, তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ার বাজার দর অর্থাৎ 100 টাকার 60 ভাগ বাদ যাবে অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে।
যাকাত দানকারীর যে পরিমাণ ঋণ আছে সে পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটা যাকাত হিসেবে ধরবে। তার ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেশা পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না তবে হযরত মাওলানা মুফতি তাকি উছমআনঈ সাহেব বলেছেন যে,
লোন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা জেলোন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয় বা মিল ফ্যাক্টরি মেশিনারিজ ক্রয় করা হয় এমন ভাবে যে সব লোন নিয়ে কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না যেমন বাড়ি পারফ্যাক্টরি ফ্যাক্টরি মেশিন মূল্যের উপর যাকাত আসে না। এসব লোন থাকলে যাকাতের জন্য বাধা নয় অর্থাৎ এসব লোনের পরিমাণ অর্থ জাগাতে হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
তবে হ্যাঁ যে লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আছে সে যেমন লোন নিয়ে ফ্যাক্টরি কাঁচামাল ক্রয় করল এখানে কাজ সকল মূল্যের উপর যাকাত আসে। এর ক্ষেত্রে এলন এর পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে। মুফতি তাকি উছমানী সাহেব এর মাসআলাটি শক্তিশালী যুক্তির দ্বারা প্রমাণিত করেছেন অতএব তার মতটি গ্রহণ করার মধ্যে সতর্কতা রয়েছে।
আবার কারও নিকট যাকাত দানকারী টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকা যাকাত দিতে হবে। পাওনা টাকা তিন প্রকার যথা
একঃ কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছেন কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রয় করছেন এবং তার মূল্য বাকি রয়েছে। হিরো পাওনা কয়েক বছর পর উসুল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমান হয় যাতে যাকাত ফরজ হয় তাহলে অত ীত বছর সমূহ যাকাত হিসেব দিতে হবে।
যদি এই ক্ষেত্রে উসূল না হয় ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসূল হবে। তাহলে ১১ তোলা রুপার মূল্য পরিমান হলে যাকাত দিতে হবে। এর চেয়ে কম পরিমাণ উসুল হলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে অল্প অল্প করে সেই পরিমাণ হয়ে গেলে তখন ওয়াজিব হবে। আর যখনই ওয়াজিব হবে তখন অতীত সকল বছরে যাকাত দিতে হবে আর যদি এরকম পাওনা টাকা নেছাবের চেয়ে কম হয় তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
দুইঃ নগদ টাকা ঋণ দেওয়া কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রয় করার কারণে পাওনা নয় বরং করে প্রয়োজনে আসবাবপত্র কাপড় চোপড় চাষাবাদের গরু ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে এরও পাওনা যদি নেছাব পরিমাণ হয়। এবং কয়েক বছর পর উসূল হয়। তাহলে ওই বছরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসূল হয় তাহলে তো ততক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হবে ততক্ষণ যাকাত ওয়াজিব হবে না। যখন উক্ত পরিমান উসুল হবে তখন বিগত বছর সময় হয়ে জায়গা দিতে হবে।
তিনঃ জগৎ মোহরে টাকা পুরস্কারের টাকা খোলার তালাকে টাকা বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনাটা থাকতে ফেরত পাওনা উসূল হওয়া পর্যন্ত যাকাত ওয়াজিব হয় না। উসুল হওয়ার পর এক বছর মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাত হিসাব শুরু হবে। পাওনা টাকা যাকাত সম্পর্কে উল্লেখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযোজ্য হবে তখন এক ওই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযোগ্য অন্য কোন অর্থ সম্পদ না থাকে। আর অন্য কোন অর্থ সম্পদ থাকলে তার মাসালা ওলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিবেন।
য়ে ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নেই এরক ঋণের উপর যাকাত ফরজ হয় না। তবে বিগত সমস্ত বছরের যাকাত দিতে হবে।
যৌথ কারবারে অর্থ নিয়োজিত থাকলে যৌথভাবে পূর্ণ অর্থের যাকাত হিসাব করা হবে না বরং প্রত্যেকের অংশের আলাদা আলাদা হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
যাকাত যেসব সোনা রুপার অলংকার স্ত্রীর মালামাল দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে স্বামীর সম্পদ ধরে হিসাব করা হবে না বরং সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি। আর সেইসব স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেওয়া হয় মালিক থেকে স্বামী। সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে এসব হিসেব করা হবে।
আর সেগুলো মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তাই স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। যেসব অলংকার ইস্ত্রী নিজস্ব সম্পদ থেকে তৈরি বা যেসব বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে সেগুলো স্ত্রী সম্পদ বলে গণ্য হবে। মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মেয়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে।
শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেওয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়। নাবালকের মেয়েদের বিয়ে শাদী উদ্দেশ্যে তাদের এক নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালকের ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে-শাদিতে ভাইয়ের লোককে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানো হয় সেটার মালিক তারা। অতএব সেগুলো পিতা-মাতা সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং
পিতা-মাতা যাকাতের হিসাবে সেগুলো ধরা হবে না। আর নাবালকের সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরি করে রাখলে বা টাকা লাগালে তারা মালিক হয়ে যায় না ততক্ষণ না সে সেটা সন্তানের দখলে দেওয়া হয়। তাদের দখল দেওয়া হলে তারা মালিক অন্যথায় সেটার মালিক পিতা-মাতা।
যাকাত হিসেবে চেয়ে কিছু বেশ কিছু যাকাত দিয়ে দেওয়া উত্তম। যাতে কোন রোগ কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেটুকু যাকাত না হলে তাতে দানের সাওয়াব তো হবেই।
সর্বশেষ কথাঃ যাকাত ২০২৩
বর্তমান সময়ের যাকাত তার সম্পদের মূল্যের উপর নির্ধারণ করে চারভাগের একভাগ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই যাকাত ২০২৩ সকলের কাছে জানার ইচ্ছা জাগে কত টাকা দিলে যাকাত সহি শুদ্ধ হবে। যাকাত ২০২৩ হিসেবে সবকিছু একটি ছেলে মেয়ে তার আর্থিক ধন সম্পদের উপর নির্ভর করে থাকে। সেখানে তার পিতা-মাতা বা অন্য কেউ সে দাগ যাকাত প্রদান করতে পারে।
আরো পোস্ট দেখুন