শিশুদের নামাজ শিক্ষা। শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে ইসলামের বিধান
বর্তমানে শিশুদের নামাজ শিক্ষা যদিও জামাতের কাতারের সাধারণ নিয়ম ও সুন্নাত হলো, প্রাপ্তবয়স্করা সামনে দাঁড়াবে ও অপ্রাপ্তবয়স্করা পেছনে থাকবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে নামাজ অশুদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ জন্য শিশুদের নামাজ একা হলে বা পেছনে দুষ্টুমির আশঙ্কা হলে বড়দের কাতারে সমানভাবে দাঁড় করানোই উত্তম।
শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে ইসলামের বিধান। |
কত বছর বয়স থেকে শিশুদের মসজিদে নেওয়া যাবে?
শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে ইসলামের বিধান রয়েছে। মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার অনেক গুরুত্ব। হাদীস শরীফে এ সংক্রান্ত একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। এজন্য জামাতে শিশুদের নামাজ পড়ার ওপর অভ্যস্ত করে তুলতে বাবারা তাদের সন্তানকে শিশুকাল থেকেই শিশুদের মসজিদে নিতে শুরু করেন। এটি খুব প্রশংসনীয় কাজ। কেননা, ছোটরা বড়দের দেখে শিশুদের নামাজ শিক্ষা শেখে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা জামাতে নামাজ পড়ার প্রতিও অভ্যস্ত হয়।
শিশুদের নামাজ শিক্ষা।
শিশুদের নামাজ শিক্ষা কিন্ত অনেক সময় শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা অভিভাবকদের বিপাকে পড়তে হয়। তাদের দুষ্টমি ও হাঁসা-হাঁসির কারণে অনেকে বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসার কারণে অভিভাবকদের ভৎর্সনা করেন। এখানে প্রশ্ন হলো- বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে এসে তারা কি ভুল করেছেন? মূলত শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে ইসলামের বিধান ও কয়েকটি শর্ত রয়েছে, যেগুলো আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।
শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে ইসলামের বিধান।
শিশুদের নামাজ শিক্ষা মূলত বাচ্চাদের মসজিদে আনার ক্ষেত্রেও কয়েকটি শর্ত রয়েছে, যেগুলো আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।
শিশু যদি এতটাই ছোট হয় যে, সে পাক-নাপাকী, পবিত্রতা-অপবিত্রতা, অজু-নামাজ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ, তাহলে তাদের মসজিদে আনা যাবে না। কেননা, তার পেশাব ইত্যাদির মাধ্যমে যেকোনো সময় মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে।
শিশু যদি খুব ছোটও হয় কিন্তু তার মাধ্যমে মসজিদের সম্মান ও পবিত্রতা বিঘ্নিত হবে না- এ রকম ধারণা থাকে তাহলেও তাকে মসজিদে না আনা ভালো হবে। এটা মাকরুহ।
তবে যে শিশু পাক-নাপাকী, অজু-নামাজ এবং মসজিদের মর্যাদা ও আদব বোঝে। তাদের মসজিদে নিয়ে আসা জায়েজ। শুধু তাই নয়; বরং সাত বছর হয়ে গেলে তাদের নিয়মিত মসজিদে নিয়ে আসা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে মসজিদে যতক্ষণ শিশু অবস্থান করেবে অভিভাবকগণ অবশ্যই ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
কোনো মসজিদে যদি এরকম একাধিক শিশু আগমন করে তাহলে বড়দের পেছনে তাদের আলাদা কাতার তৈরি করা মুস্তাহাব। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে বড়দের কাতারের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করিয়ে দেয়াটাই উপযোগী। কেননা, একাধিক শিশু এক কাতারে দাঁড়ালে তারা তো নিজেদের নামাজ নষ্ট করবেই একইসাথে বড়দের নামাজেরও ক্ষতি করতে পারে।
শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে হাদিস।
শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা সম্পর্কে হাদিস শিশুদের নামাজ শিক্ষা। আজকে শিশুদের শিশুদের নামাজের উৎসাহিত ও অভ্যস্ত করাতে সহায়ক ১০ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
- দৃষ্টান্ত তৈরির মাধ্যমে শিক্ষা: শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুকরণ করে। তাই তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আপনি ওজু ও নামাজ আদায় করুন। এতে করে তারা আপনাকে অনুকরণ করে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত হবে।
শিশুর জন্য তার পিতা-মাতা প্রথম শিক্ষক। আপনাকে দেখেই আপনার শিশু বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করবে। যদি আপনি আপনার নিজের সকল কাজের চেয়ে নামাজকে গুরুত্ব দেন, আপনার শিশুও নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে বেড়ে উঠবে।
- শৈশবেই ইবাদতের সূচনা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাত বছর বয়স হলেই তোমার শিশুকে নামাজ শিক্ষা দাও। দশ বছর বয়সে তারা নামাজ আদায় না করলে তাদেরকে শাসন করো এবং বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ, আহমাদ)
যদিও দশ বছর হওয়ার আগে শিশুদের নামাজ আদায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তথাপি তাদের শৈশবেই ঘরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন যাতে করে তারা নামাজ আদায়ে উৎসাহিত হয়।
- শিশুর নিজের জায়নামায: নামাজের জন্য উৎসাহিত করতে শিশুদেরকে নিজস্ব জায়নামায দিন। তাদের জায়নামায তাদেরকে নিয়মিত ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন।
- নামাযের দৃশ্যমান সময়সূচি: শিশুরা সর্বদাই দৃশ্যমান বস্তু ও তালিকায় প্রতিক্রিয়া করে। শিশুকে নামাজে উৎসাহিত করার জন্য নামাজের সময়সূচি সম্বলিত ঘড়ি, পঞ্জিকা ইত্যাদি ঘরে ঝুলিয়ে রাখুন। এসকল দৃশ্যমান সময়সূচি আপনার শিশুকে নামাজের জন্য উৎসাহিত করবে।
- নামাজ-পার্টি: মাঝে মাঝে আপনার শিশুকে তার সকল বন্ধু-বান্ধবসহ একসাঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য একত্রিত করুন। তাদেরকে নামাজেরর জন্য জায়নামায, টুপি, হিজাব, তসবিহ দিন। এরপর একসঙ্গে নামাজ আদায় করুন। নামাজ শেষে তাদেরকে চকলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি উপহার দিন এবং সম্ভব হলে নবী ও সাহাবীদের জীবনী হতে কিছু গল্প তাদের শোনান।
- আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা প্রদান: আল্লাহর কথা জানানো ছাড়া শিশুকে নামাজ শেখানো খুব কার্যকরী নয়। শিশুকে আল্লাহর সম্পর্কে জানান এবং তাঁর অফুরান অনন্ত নেয়ামতের কিছু বিবরণ দিন। আল্লাহর এই নেয়ামতসমূহের শোকর আদায়ের জন্য নামাজ পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দিন।
- রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবন সম্পর্কে আপনার শিশুকে শিক্ষা দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তার হিরোতে পরিণত করুন এবং তার প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভালোবাসা থেকেই তারা তাঁর অনুকরণে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত হবে।
- ধীর পদক্ষেপ: শিশুকে নামাজ আদায়ের শিক্ষায় তাড়াহুড়া না করে ধীর পদক্ষেপে অগ্রসর হোন। কখনোই আশা করবেন না, আপনার শিশু একবারেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে ফেলবে।
- অভিভাবকের দৃঢ়তা: যদিও আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিজে থেকে নামাজ আদায় করেই বড় হোক, তথাপি একসময় হয়তো তারা নামাজে অবহেলা করবে এবং নামাজ আদায় করতে চাইবে না।
পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করা। কখনই তাদেরকে নামাজ ছেড়ে দিতে না দেয়া। এক্ষেত্রে দৃঢ়তা বজায় রাখুন।
- পারিবারিক সময়দান দান বা পারিবারিকভাবে মাঝে মাঝে একসঙ্গে নামাজ আদায় করা। পিতার ইমামতিতে পরিবারের সকলকে নিয়ে নামাজের জামাত করতে পারা। আপনার শিশু সক্ষম হলে তাকে আজান ও ইকামত দিতে দিন।
জুমা ও ঈদের নামাজে আপনার শিশুকে নিয়েই নামাজ আদায় করুন। বিশাল জামাতে নামাজ আদায়ের দৃশ্য তাকে তার পরিচয় সম্পর্কে সচেতন ও নামাজে উৎসাহিত করবে।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা শিশুদেরকে সঠিকভাবে নামাজের শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।