শবে বরাতের নামাজ নিয়ম কত রাকাত-easykhobor

ট্রাভেল ব্লগ এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন

শবে বরাত হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। যে রাতে মুসল্লীরা ইবাদতে মগ্ন থাকেন। কিন্ত অনেকেই মনে প্রশ্ন জেগে উঠে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কি? আর তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানাতে এসেছি।

সূচিপত্রঃ এক নজরে শবে বরাতঃ

আপনারা সবাই শবে বরাতের নামাজের নিয়ম জেনে সঠিক এবাদত করতে পারেন এবং রোজা সম্পর্কে জেনে সঠিক ভাবে রোজা পালন করতে পারেন। কারণ আমাদের সকলের কাছে রমজান মাস হচ্ছে অতি প্রিয় মাস। আর এই অতিপ্রিয় মাসে পূর্বে আমরা শবে মেরাজ এবং শবে বরাত পালন করে থাকে। যদিওবা শবে মেরাজের ইবাদত করা হচ্ছে বিদআত, কিন্ত শবে বরাতের ইবাদত বিদআত নয়। চলুন তাহলে শুরু করি শবে বরাতের নামাজের নিয়ম আমাদের আজকের বিষয়টি।

শবে বরাত শব্দের অর্থ কি?

শবেবরাত শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ থেকে। আর “শবে” শব্দের অর্থ “রাত” এবং ”বরাত” শব্দের অর্থ “মুক্তি”। অর্থাৎ “শবে বরাত” এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে “মুক্তির রাত”।শবে বরাতকে আরবিতে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়।

অন্যদিকে হাদিস শরিফে শবে বরাতকে নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য দিবসে রজনী বলা হয়।

শবে বরাতে নামাজ কত রাকাত?

আমরা সকলেই জানি যে শবে বরাতের ইবাদত করতে হয়। আর এই সকল উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নামাজ। সুতরাং শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করা এবং মহান আল্লাহর নিকট বেশী বেশী তওবা করে পাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে শবে বরাত এর নামাজ কত রাকাত? আমরা সকলেই জানি যে শবে বরাতের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ। শবে বরাতের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। বান্দা তার ইচ্ছেমত এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কত রাকাত নামাজ পড়তে পারে কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে।

কিছু কিছু ইসলামিক বই পাওয়া যায় শবে বরাতের নামাজ ১২ রাকাত ১০০ রাকাত। কিন্ত এই নামাজ গুলো হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়। সুতরাং মুসলমান ভাই ও বোনেরা শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে উদবিগ্ন হবেন না আপনারা আপনাদের নিজেদের সামর্থ্য এবং ইচ্ছে মত যত রাকাত নামাজ পড়তে পারেন ঠিক ততটাই নামাজ পড়বেন।

আপনারা যদি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা চান এবং কান্নাকাটি করে নিজের অপরাধবোধ উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে সেটি মহান আল্লাহর কাছে কবুল হবে এবং একাধিক রাকাত নামাজ পড়লেও আল্লাহর কাছে কবুল হবে।

সুতরাং শবে বরাতের নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। যে যেমন যত রাকাত পড়তে পারে ঠিক সেরকমই নফল নামাজ আদায় করবে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম।

আমরা আগেই জেনেছি যে শবে বরাতের নামাজের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। আপনার যত ইচ্ছা তত রাকাত নামাজ পড়তে পারবেন। কিনতু শবেবরাতে আপনারা যে নামাজ পড়বেন সে নামাজ অবশ্যই নফল হিসেবে গণ্য হবে। আপনারা যেমন স্বাভাবিকভাবে নফল নামাজ আদায় করেন ঠিক সেভাবে শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করতে হবে।

শবে বরাতের দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে হয়। তবে যে যত বেশি নফল নামাজ আদায় করবে তার তত বেশি হবে। শবে বরাতের নফল নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এর সাথে সূরা ইখলাস, সূরা কদর, আয়াতুল কুরছি বা সুরা তাকাসুর ইত্যাদি সূরা গুলো যদি মিলিয়ে পড়া হয় তাহলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

শবে বরাতের নফল নামাজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন শা’বানের মধ্য দিবস অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যে তারিখ আসবে তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে এবং দিনে রোযা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)।

রাতের ইবাদত বলতে নামাজ হলো শ্রেষ্ঠ। আর নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে নফল নামাজ। আর এই সকল নামাজের মধ্যে রয়েছে বাদ মাগরিব ৬ থেকে ২০ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে এবং এসবের মধ্যে কোন মন্দ কথা না বলে তাহলে এই নামাজ ১২ বছরের ইবাদাতের সমতুল্য গণ্য হবে।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর ২০ রাকাত নামাজ আদায় করবে, তখন মহান আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস- ৪৪৯-৪৫০)।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

তবে নিয়ে রাতের শ্রেষ্ঠ তম এবাদাত হল তাহাজ্জত নামাজ। এছাড়াও আপনারা শবে বরাতের রাতে সালাতুল তাজবি এবং অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

আমরা আপনাদের সুবিধার্থে  শবে বরাতের নফল দুই রাকাত নামাজের তুমিও উল্লেখ করছি। আপনারা এই নিয়মে একাধিক নফল নামাজ পড়তে পারবে। তবে অবশ্যই দুই রাকাত করে নফল নামাজ নিয়ত করতে হবে।

প্রথমত ওযু করে কিবলামুখী হতে হবে।

শবে বরাতের দুই রাকাত নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে।

নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলে সানা, সূরা ফাতিহা এর সাথে সূরা ইখলাস, সূরা কদর, আয়াতুল কুরছি বা সুরা তাকাসুর ইত্যাদি নিয়ে পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা এই সকল প্রয়োগ করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

এরপর অন্যান্য নফল নামাজের মত রুকু এবং সিজদা  দিতে হবে এরপর আবার দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাকাত পড়তে হবে।

দ্বিতীয় রাকাতে সিজদা দেয়ার পর আত্তাহিয়াতু, দুরুদ শরীফ এবং মা- সূরা দোয়া সমূহ পাঠ করতে হবে। এই দোয়া গুলো পাঠ করার পর সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত করতে হবে। মনে যাতে আপনার সকল মনের।

অনুভূতি আল্লাহর নিকট বলতে হবে বারবার তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হতে হবে।

এভাবে আপনারা সবাই বরাতের নফল নামাজ পড়তে পারবেন। অন্যান্য সকল নামাজের মতই বরাতের নামাজ  কিন্তু সূরা পাঠ এর ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

শবে বরাতের নামাজের বিশেষ কোন নিয়ম নেই। অন্যান্য নফল নামায পড়ার জন্য আমরা যেভাবে নিয়ত করি ঠিক সেভাবেই শবে বরাতের নামাজের নিয়ত করতে হবে। তবে অবশ্যই উল্লেখ রাখতে হবে যে এই নফল নামাজ বরাতের নফল নামাজ।

আপনারা চাইলে আরবিতে বা নিজের ভাষায় নফল নামাজের নিয়ত করতে পারেন। আমরা নিম্নে শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ত উল্লেখ করছি-

১. শবে বরাতে কত রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়?

উত্তরঃ শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোন নামাজের রাকাত নেই। তবে হাদীস শরীফের ইতিহাস অনুসারে আপনারা নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

২. শবে বরাতে কয়টি রোজা রাখতে হয়?

উত্তরঃ  শবে বরাতের নির্দিষ্টসংখ্যক কোন রোজা নেই। তবে শাবান মাসের মধ্য দিবসে তিনটিরোজা রাখতে পারেন।

৩. শবে বরাতে হালুয়া রুটি তৈরি করা কি বাধ্যতামূলক?

উত্তরঃ শবে বরাতে হালুয়া রুটি তৈরি করা বাধ্যতামূলক না। এমনকি এমন কোন হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি যে শবে বরাতের হালুয়া তৈরি করতে হবে। আপনারা এগুলো চাইলে অন্যান্য দিনে তৈরি করে খেতে পারব। তবে শবে বরাতে রাতে এগুলো তৈরি না করাই শ্রেয়। এতে করে এগুলো তৈরি করলে ক্লান্তি চলে আসে এবং বান্দা এবার থেকে দূরে সরে যায়।

৪. শবে বরাতে কোন ধরনের গুনাহ মহান আল্লাহতালা ক্ষমা করবেন না?

উত্তরঃ শবে বরাতে যে ধরনের গুনাহ মহান আল্লাহতায়ালা মাফ করবেন না সেগুলো হচ্ছে- আত্মীয়র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, শিরক করা, হিংসা ও অহংকার করা ইত্যাদি।

৫. শাবান মাসের রোজা রাখলে কি শবে বরাতের রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে?

উত্তরঃ  শাবান মাসের রোজা রাখলে শবে বরাতের রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন